এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করা দেশের মানুষের নৈতিক দায়িত্ব : বুলু

এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করা দেশের মানুষের নৈতিক দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ফরিদপুর শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষের একটাই দাবি- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। এই দাবিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়েছে। সেই আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ১৭ জন ভাইকে হারিয়েছি। এই ১৭ জন ভাই বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন। আজকে আমরা যদি শেখ হাসিনার পতন না ঘটাতে পারি, তাহলে ১৭ জন ভাইয়ের রক্ত বৃথা যাবে, তাদের রক্তের ঋণ আমরা পরিশোধ করতে পারব না।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশকে একটি বিদেশি তাবেদার নাস্তিকবাদ সরকার নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রথমেই এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করব একটি মাত্র কারণেই, আজকে এদেশের আলেম-ওলামা আছেন, পীর-মাশায়েখরা আছেন, এদেশে ৯৫ ভাগ মুসলমান বসবাস করেন,  আর এদেশের পাঠ্যপুস্তকে ডারউইনের থিউরি নিয়ে এসেছে। আমরা নাকি বানর থেকে বিবর্তন হয়ে মানুষ হয়েছি। তাহলে কোরআনের যে ঐশী বাণী- আদম হাওয়া থেকে মানুষের সৃষ্টি, তা মিথ্যা হয়ে যাবে। এই সরকারের ও শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করা এদেশের মানুষের সবার নৈতিক দায়িত্ব।

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, এই সরকার দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিগত ১৪ বছরে ১৪ লাখ কোটি টাকা এই দেশ থেকে পাচার করেছে। কানাডায় হাজার হাজার বাড়ি করেছেন আওয়ামী পরিবারের লোকেরা। কানাডায় যারা আগের থেকে বসবাস করেন, আমাদের যে সমস্ত মেধাবী ছেলে-মেয়েরা কানাডায় গিয়ে লেখাপড়া করে উচ্চ পদে চাকরি করেন, লজ্জায় তাদের মাথা হেট হয়ে গেছে। কানাডায় তারা সংগঠন করেছে আওয়ামী ঘরানার লোকেরা যেন কানাডায় বাড়ি কিনতে না পারেন। এজন্য কানাডার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কানাডার সরকার আইন করেছে তারা বাংলাদেশের আওয়ামী লুটেরাদের বাড়ি কিনতে দেবে না। তাই এখন তারা দুবাই গিয়েছেন, দুবাইতে ইতোমধ্যে সাড়ে সাতশ বাড়ি কিনেছেন। একেক বাড়ির দাম দুইশ-তিনশ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, আপনাদের মাদারীপুরের একজন সন্তান মাত্র চার বছরের এমপি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ছিলেন। উনি চার বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭টি বাড়ির মালিক হয়েছেন। তারা এমনিভাবে দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে।

বুলু বলেন,শেখ হাসিনা সংসদে একটি আইন পাস করেছেন কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না। লাখ লাখ কোটি টাকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ লুণ্ঠন করে আওয়ামী পরিবারের লোকেরা বিশ্ব ধনীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যখন বাংলাদেশে কিছু বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এখন তো বিদ্যুৎ আমাদের টুকরিতে করে ফেরি করে বিক্রি করতে হবে। আজকে বিদ্যুতের দাম যেভাবে বেড়েছে,  আজকে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস। আজকে এক পরিবার থেকে ৬০ জন এমপি আছেন বাংলাদেশে। এইটা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান ও সেলিমুজ্জামান। 

ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি এ এস এম কাইয়ুমের সভাপতিত্বে এবং ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আজম খান, আবজাল হোসেন খান পলাশ, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল আলম, শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম, গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. রফিকুজ্জামান, মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত হোসেন, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম মিয়া, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুল হাসান ভূইয়া পিংকু, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম মিয়া, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসিরুল হক, কাজী হুমায়ুন কবীর, ইয়াসমিন আরা হক, ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন মেজবা প্রমুখ।