ব্রেকিং:
ব্যালটে ভুল প্রতীক, কসবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বদলি সাংবাদিকদের নাস্তার প্যাকেটে টাকার খাম! বান্দরবানে যৌথবাহিনীর অভিযানে কেএনএফের সন্ত্রাসী নিহত উপজেলা নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী সৌদিতে ফখরুল-ফালুর রুদ্ধদ্বার বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় ৫ম বারের মতো প্রেসিডেন্টের শপথ নিলেন পুতিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিল বৃষ্টি, বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ শিক্ষার্থী দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস তেলের দাম বাড়াল সৌদি কেজিতে ১০ টাকা কমলো পেঁয়াজের দাম তিন রাত শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট বন্ধ কুমিল্লায় ‘কোরবানির আগে পেঁয়াজের দাম হবে ৫০ টাকার মধ্যে’ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ খাদ্য নিরাপত্তায় ২০ লাখ টন গম কিনছে সরকার শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস, আ.লীগ নেতাকে অব্যহতি কেন পিছু হঠল আওয়ামী লীগ কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয়? কুমিল্লায় সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন র‍্যাব কর্মকর্তা
  • বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের রাজনীতি

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২  

দক্ষিণ এশিয়ার সাগর বেষ্টিত দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় এক ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম দেশটির এমন পরিস্থিতি কারও কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। সাম্প্রতিক বহুমাত্রিক সংকটে নিমজ্জিত দেশটিকে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছ। এই তো কিছুদিন আগেও দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অগ্রসর অর্থনীতির দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে গোটা বিশ্বই সমীহ করত। শ্রীমাভো বন্দর নায়েকের আমলে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবার নজর কেড়েছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নতি সাধন করেছিল। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি সব মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মানবৃদ্ধি পেয়েছিল। অর্মত্য সেনের মতো বড় বড় অর্থনীতিবিদরা শ্রীলঙ্কার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে শ্রীলঙ্কার উদাহরণ উপস্থাপন করা হত বিভিন্ন দেশে। সেই দেশটি এখন অগ্নিগর্ভে। অর্থনৈতিকভাবে দেশটি বিপর্যস্ত। নানাবিধ সংকটের মুখে সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ। তারা রাজপথে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ কমাতে দেশটিতে সান্ধ্য আইন জারি করেও বিক্ষোভ দমাতে পারছে না। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী রাজপক্ষে পদত্যাগ করেছে। প্রাণ বাঁচাতে সপরিবারে সেনা প্রহরায় নৌ-ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা শাসক দলের তিনজন সাবেক মন্ত্রী (সদ্য পদত্যাগকারী) ও দুইজন এমপির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী রাজপক্ষের পৈত্রিক বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়েছে। শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ ও বিরোধীদল প্রেসিডেন্ট গুতাবায়েরও পদত্যাগ দাবি করছে। রাজনৈতিক এমন পরিস্থিতিতে কত মানুষ হতাহত হয়েছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু ও ২০০ শর বেশি আহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট গুতাবায়ে রাজপক্ষে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজপক্ষেরই ছোট ভাই। প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে ব্যপক ক্ষমতা প্রদান করেছে। উত্তাল শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনীও জনতাকে প্রতিরোধ করতে পারছে না। এই লেখা যখন লিখছি তখন জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ‘রনিল বিক্রমাসিংহে’।

শ্রীলঙ্কার এমন পরিস্থিতি নিয়ে নানা রকম বিশ্লেষণ চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সরকারি কতগুলো ভুল সিদ্ধান্ত এবং কতৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই ভয়ংকর পরিণতি হয়েছে। শ্রীলঙ্কার অতীত ভালো-মন্দ দুটোই রয়েছে। বিশেষত: বামপন্থি বন্দর নায়েকের পর জে আর জয়বর্ধনের ডানপন্থি শক্তির উত্থান ঘটে। সিংহলি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে প্রভাকরণের সন্ত্রাসবাদ রাজনীতিরও বিস্তার ঘটে। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটানা ২৬ বছর গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল সেখানে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণও ঘটে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থার জন্য অতীতের বেশ কিছু ঘটনার প্রভাব রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বীপ রাষ্ট্রটির আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে পর্যটন শিল্প। কিন্তু ২০১৯ সালে এপ্রিল মাসে কলম্বোর একাধিক চার্চ ও বিভিন্ন হোটেলে ধাররাহাবিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে পর্যটন খাতে বড় ধাক্কা লাগে। বিস্ফোরণে প্রায় ২০ লোকের বেশি প্রাণ হানি ঘটে। বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ৭০ শতাংশ পর্যটক কমে গেলে রাজস্বে সীমাহীন ঘাটতি দেখা দেয়। ২০২০ সাল থেকে টানা দুই বছরেরও বেশি করোনাঘাতে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই গতি হারিয়ে ফেলে। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠে। এদিকে ২০১৯ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে গোতাবায়ে কতগুলো জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে। প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল নাগরিকদের কর হ্রাস, বিনামূল্যে চিকিৎসা, কৃষকদের বিনামূল্যে সার-বীজ প্রদানসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। ভোটে জিতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কার্যক্রমও শুরু করে। ভ্যাটের পরিমাণ ১৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ করে দেন। সব রকমের পণ্য পরিষেবার ওপর প্রচলিত ২ শতাংশ নেশন ট্যাক্সও মওকুফ করে দেন। শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের আয়ের ওপর করের পরিমাণও কমিয়ে দেয় সরকার। এতে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেয়। ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে দেশটি। সাধারণ জনগণ নানারকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে প্রথম দিকে খুশি থাকলেও যখন সবকিছু সামাল দিতে সরকার ব্যর্থ হয়, তখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে জনতা। অর্থনৈতিক টানাপড়নে সরকার নানাবিধ চেষ্টা তদবির শুরু করে। আমদানি খরচ কমাতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব্য আমদানি বন্ধ করে দেয়। শুধু দেশীয় জৈবসারের ওপর নির্ভর করায় কৃষি উৎপাদন বহুলাংশে কমে যায়। দেখা দেয় খাদ্য ঘাটতি। চা অন্যতম প্রধান কৃষি পণ্য শ্রীলঙ্কার। চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত দেশটি। জৈবসার নির্ভরতায় চা-কফি উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ায় রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যায়। কৃষি খাত ভেঙে পড়ে। চালের মূল্য ২০০ টাকার ওপরে। চিনির কেজি আড়াইশ টাকার কাছাকাছি। একটি ডিমের মূল্য ৩০ টাকা। শিশু খাদ্য গুড়া দুধ মিলছে না। পাওয়া যাচ্ছে না শিল্পজাত পণ্য। নিউজপ্রিন্টের অভাবে পত্রিকা বন্ধ। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ। শতকরা ৯৫ শতাংশ শিক্ষিত শ্রীলঙ্কা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। ২৪ ঘণ্টার দিনরাতে ১২/১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। উচ্চাভিলাষি মেগা প্রকল্পের নামে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হয়, তা এখন শোধ দিতে পারছে না বিধায় পুনরায় ঋণও পাচ্ছে না। জ্বালানি সংকট তীব্র। গাড়ি চলে না, গণপরিবহনও অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। জনজীবন বিধ্বস্ত। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণেরও হয়নি যথাযথ ব্যবহার, মেগা প্রকল্প থেকেও কোনো আয় হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট গুতাবায়ের আত্মীয়-স্বজন রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে লুটপাটতন্ত্র কায়েম করেছে বলে জনগণের অভিযোগ। গুতাবায়ের এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা। ক্ষমতায় থাকাটাও বিপজ্জনক, ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরও রয়েছে প্রাণহানির শঙ্কা। দেশটির ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই পলায়নপর অবস্থায় রয়েছে। শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বেই ভোগ্য পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এমনিতেই করোনাকালীন অর্থনীতির চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিশ্বকে, এর ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপের বাড়তি মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

বর্তমান শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি সামলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প কিছু আপাতত নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অতি সম্প্রতি পাকিস্তানে ইমরান খানের পতনও একটি দৃষ্টান্ত। ভারত, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপও এ ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে কীনা সেটিও ভেবে দেখতে হবে। শ্রীলঙ্কার হামবানটো বন্দর এখন চীনের দখলে। গা বাঁচাতে ৯৯ বছরের লীজ দিতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এদিকে শ্রীলঙ্কার এ ভয়ংকর পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ সরগরম হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। টানা তিন বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করছে সারা বিশ্বই। দেশে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনকালে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সেই সঙ্গে বেড়েছে জীবনমানও। সব সূচকেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ঈর্শনীয়। উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্বের সব জায়গাতেই বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এক সময় শ্রীলঙ্কা উন্নয়নের রোল মডেলের অণুষজ্ঞ ছিল। সেই শ্রীলঙ্কা এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। আর তাই বাংলাদেশের সরকারবিরোধীরা কথায় কথায় শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতিকে টেনে আনছে রাজনীতিতে।

এমনিতেই বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা কালো শক্তি দেশকে বিপদে ফেলতে তৎপর থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকারি দলের মধ্যেও চিন্তার ভাজ পড়েছে। মুখে যা-ই বলুক, তারা যে শঙ্কিত তাতে কোনো সন্দেহর অবকাশ নেই। সম্প্রতি নতুন মেগা প্রকল্প থেকে সরকার এরই মধ্যে সরে আসছে। গত একনেক সভায় সরকার প্রধান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বড় বড় নতুন রাস্তাঘাটের পরিবর্তে পুরানো রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামতের প্রতি জোর দিয়েছেন। প্রতিদিনই পত্রিকার খবরে দেখছি সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সচিত্র প্রতিবেদন। সরকার দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করলেও সে নীতি অনুসারে যে দেশটি চলছে না তা বোধ করি পাগলেও বুঝতে পারছে। টি আইবির গবেষণা প্রতিবেদনে নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে নিয়মিত। গত ১২ মে’র ইত্তেফাকে প্রকাশিত টিআইবির একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও কর্মী ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের পকেটে গেছে এ টাকা। একই দিনে ইত্তেফাকে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে- এটা টিআইবির নয়। এতে বলা হয়েছে ডিজিটাল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি। মালামালের খবর নেই অথচ ঠিকাদারের বিল পরিশোধ। প্রকল্প পরিচালক মাল বুঝে না পেয়েই ঠিকাদারকে বিল দিয়েছেন নিজেও ভাগ নিয়েছেন। কোনো কোনো পণ্য কেনা না হলেও প্রকল্প পরিচালক টাকা তুলে পকেটে পুরেছেন। এ রকম অসংখ্য দুর্নীতির খবর প্রতিদিন বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। যদিও টিআইবির কোনো প্রতিবেদনই সরকারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। একপেশে বলে উড়িয়ে দিচ্ছে সরকার। তবে জনমনে প্রবলভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে রাজনীতিতে যে সম্ভার হচ্ছে তাতে জনগণের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশও কী শ্রীলঙ্কার মতো হবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে একেবারেই নির্ভার। সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে অনেকটাই মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে বলেই বিচলিত নয়। তবে সরকার প্রধান যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে থেকে পরিষদকে নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচন গত দুটো নির্বাচনের মতো যাতে না হয়, সে দিকটায়ও খেয়াল রাখছে। গণতান্ত্রিকভাবে সংবিধান অনুসারে গত দুটো নির্বাচন হলেও দুটো নির্বাচন যে ভালো হয়নি তা সরকারি দলও স্বীকার করে। একটি দেশের গণতন্ত্রকে বিকাশমান ধারায় অব্যাহত রাখতে সুশাসন জরুরি। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে কখনও একটি দেশ দেউলিয়া হয় না। দেশের আভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধিতে মনোযোগ থাকাটাই বড় কথা। বৈদেশিক বিনিয়োগের চেয়ে দেশীয় বিনিয়োগে কার্যকরি ভূমিকা রাখা দরকার। একজন শিল্প উদ্যোক্তাকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ না দিয়ে হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এতে কর্মসংস্থানও অধিক হারে সৃষ্টি হবে। এ মুহূর্তে একটি জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। দলমত নির্বিশেষে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দেশটিকে গড়ে তোলতে হবে। ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়াটাকে বড় করে না দেখে সম্মিলিতভাবে দেশের মানুষকে ভালো রাখতে চেষ্টা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। বাঙালির রয়েছে তেজোদীপ্ত শক্তি, সেই শক্তি কাজে লাগাতে পারলে কোনো বিপদই আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।